সুনিল ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনের ওভার ব্রিজ সংলগ্ন স্থানে জুতা স্যান্ডেল কালি ও সেলাই এর কাজ করে থাকেন। তার অসহায়ভাবে বসে থাকা আর মাথার উপরে পলিথিন দিয়ে ছিদ্র বন্ধ করা জরাজীর্ণ একটি ছাতা। করোনা আর লকডাউনে বেশ অভাবের মধ্যে দিন কেটেছে সুনিলের। তাই সংসার চালাতে কোনো বাড়তি খরচ করতে পারছেন না। বর্তমানে কাজ কর্ম নেই বল্লেই চলে। সারাদিনে যা উপার্জন করেন তাই দিয়ে কোনো মতে ডাল ভাত খেয়ে জীবনযাপন করছেন তিনি।
কথা হয় যিনি এই ছবি তুলেছিলেন সাংবাদিক টিপু সুলতানের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিষয়টি আমার খুব খারাপ লেগেছিলো। সুনিলদার সঙ্গে পরিচয় আমার দীর্ঘদিনের। তার বাবা সর্গীয় রাখাল দাস তিনি বেতের কারিগর ছিলেন। বাবার মৃত্যুর পরে সংসারের দায়িত্ব চলে আসে সুনিলের ওপর। সুনিল শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী। তবু আত্মসম্মানবোধ থেকে কারো কাছে কখনো হাত পাতেন না। পরিবারে স্ত্রী, দুই সন্তান আর দুই বিধবা বোন। বোনদের বিয়ে হয়েছিলো। কিন্তু প্রতিবন্ধী হওয়ায় সংসার টেকেনি তাদের। চরম কষ্টের মধ্যে দিনযাপন করতে হয় তাদের। সাধ আছে সাধ্য নেই তাই ছবিটি পোস্ট দিয়েছিলাম ফেসবুকে। যদি কেউ এগিয়ে আসে। ছবি পোস্ট দেওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে মানবিক পুলিশ সুপার সুনিলের জন্য পৌঁছে দিলেন নতুন ছাতা। একটি ছাতার দাম হয়তো বেশি না। তবু সহযোগিতার হাত কয়জন বাড়িয়ে দেন। তাই বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানাই পুলিশ সুপারকে।
উপহার পেয়ে সুনিল জানান, এ যেন মেঘ না চাইতে বৃষ্টি। পুলিশ সুপার আমার জন্য ছাতি কিনে দেবে এটা কল্পনাই করি নাই। খুব ভালো লেগেছে। জীবনে কত পুলিশ সামনের পর দেখলাম। আমাদের মতো এই ছোট জাতের মানুষের সঙ্গে কেউ ভালোভাবে কথাই বলে না। তবে যিনি আমার জন্য এই ছাতা কিনে দিয়েছেন তিনি সবসময় সৃষ্টিকর্তার ছায়ায় থাকবেন। আশীর্বাদ রইলো তার জন্য।
এই ছাতা উপহার দেওয়ার বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, সমাজে কত রকমের মানুষ বসবাস করছে। সবার জন্য তো আমরা এগিয়ে আসতে পারছিনা। সংশ্লিষ্ট উপজেলার কোনো এক গণমাধ্যমকর্মী তার ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করেন। বিষয়টি আমার নজরে আসে। সঙ্গে সঙ্গে আমি থানা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি সেখানে যেতে। আর তাকে সঙ্গে নিয়ে একটি নতুন ছাতা কিনে দিতে বলি। একটি ছাতার জন্য এই দরিদ্র মানুষ কত কষ্ট করছে বিষয়টি আমার খারাপ লেগেছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি সামাজিক কাজ করতে আমার বেশ ভালো লাগে। সমাজের বিত্তবান মানুষ যদি সামাজিক ভালো কাজে এগিয়ে আসতো তা হলে এই সুনিলের মত মানুষদের আর কষ্ট থাকতো না। তাই রাস্ট্রের পাশাপাশি সামাজিকভাবে সবাইকে ভালো কাজে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই একটি সুন্দর সমাজ হবে সুন্দর রাষ্ট্র হবে। প্রধানমন্ত্রী যেমন সব দরিদ্র মানুষদের জন্য ঘর তৈরি করে দিচ্ছেন। তেমনি সমাজে অনেক বিত্তবান মানুষ আছে তারাও ইচ্ছা করলে এই কাজটি করতে পারেন। তবেই তো বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ হবে, আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ হবে।
আপনার মতামত লিখুন :