চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় এক নবজাতক শিশুর মৃত্যু হয়েছে এমন অভিযোগ করেছেন স্বজনরা। বৃহস্পতিবার (১৯ আগষ্ট) সকালে জেলা শহরের নিমতলা মোড় সংলগ্ন ফকিরপাড়াস্থ নবাব নার্সিং হোমে নবজাতক শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নিহত শিশুর পিতা মতিউর রহমান থানায় লিখিত অভিযোগ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
মতিউর রহমান রাজশাহীর তানোর উপজেলার বিল্লি-বংপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বলেন, ক্লিনিক মালিক ডা. ইউসুফ আলীসহ তিনজন নার্সকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। বুধবার (১৮ আগষ্ট) আমার স্ত্রী প্রসব বেদনা উঠলে নিমতলা মোড়ের ফকিরপাড়ায় নবাব নার্সিং হোম-এর বহিঃর্বিভাগে ভর্তি করি। এসময় বহিঃর্বিভাগের চিকিৎসক প্রসূতি মাকে চিকিৎসা হিসেবে একটি ইনজেকশন লিখে দেন।
মতিউর রহমান আরও বলেন, ক্লিনিকের সামনে থেকে ডাক্তারের লিখে দেয়া ইনজেকশনটি নিয়ে আসতে বলেন। ইনজেকশনটি পুশ করলেই প্রসূতি মা সুস্থ হয়ে যাবেন বলে জানান চিকিৎসক। ইনজেকশন নিয়ে আসার পর ঠিক আছে কিনা তা দেখানোর জন্য ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে তিনি সেটি ফেরত দিয়ে তার ব্যক্তিগত চেম্বার ফার্মেসী থেকে নিয়ে আসতে বলেন।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে প্রসূতি মা অসুস্থ হয়ে গেলে আবার ইনজেকশন দেন নার্স। চিকিৎসকের কথা মতো বৃহস্পতিবার (১৯ আগষ্ট) সকালে শিশু ভূমিষ্ট হয়। পেটে শিশুর বয়স পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় এবং ভুল চিকিৎসায় অসুস্থ হয়ে গেলে শিশুকে সঙ্গে নিয়ে মতিউর ও রেবিনা বেগম দম্পতিকে সদর হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। এর কিছু সময় পরই সেখানে বসেই শিশুটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
মৃত শিশুর ভুক্তভূগি মা রেবিনা বেগম বলেন, ক্লিনিকে ভর্তির আগেই ৮ হাজার টাকা দাবি করে ডাক্তার, পরে ভর্তির আগেই আড়াই হাজার টাকা দেয়। শিশু মারা গেলেও বাকি টাকার জন্য বিভিন্নভাবে চাপ দিচ্ছে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। ক্লিনিকের নার্সসহ প্রতিটি স্টাফের ব্যবহার খুব খারাপ। আমরা ইনজেকশন দিতে নার্সকে অনেক নিষেধ করলেও শোনেননি নার্স। ভুল চিকিৎসা ও ইনজেকশন করাতে শিশু মারা গেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ক্লিনিক মালিক ডা. ইউসুফ আলি মুঠোফোনে বলেন, চিকিৎসায় বিলম্ব করা এবং পেটে প্রাপ্ত বয়স না হওয়ার কারণেই শিশুটির মৃত্যু হতে পারে। আমি যথা সময়ে আমার ক্লিনিকে চিকিৎসা দিয়ে সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে রেফার্ড করেছিলাম। এর চেয়ে বেশী আমাদের করার কিছু ছিলোনা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিভিল সার্জন ডাঃ জাহিদ নজরুল চৌধুরী মুঠোফোনে জানান, বিষয়টি আমি অবগত নয়। তবে এধরনের অপরাধ সত্যি অন্যায় ও দুঃখজনক। কেউ অভিযোগ না করলেও আমি বিষয়টি নিজ তাগিদে যথাযথ ব্যবস্থা নিবো।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফফর হোসেন জানান, এবিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি, করলে তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ// ফয়সাল আজম অপু
আপনার মতামত লিখুন :